চাকরি করতে সাধারণত কারোরই ভালো লাগে না। তবু মানুষ এই রুটিনবাঁধা জীবন মেনে নেয় জীবনের প্রয়োজনে। এ দেশে কর্মরত বেশিরভাগ মানুষই মনে সুখ নিয়ে চাকরি করতে পারে না। কারণ আমাদের কর্মপরিবেশ, শ্রম আইন কোনোকিছুই ঠিক নেই।
আপনি চাকরি করছেন মানে ওই কাজে আপনার পারদর্শিতা আছে এবং তার মাধ্যমে আপনি অন্যদের সেবা প্রদান করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। কিন্তু আপনার সাথে এমন আচরণ করা হবে যেন মাস শেষে বেতনটা আপনাকে দান করা হচ্ছে। আপনি কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত সম্মান পাবেন না; যা আপনাকে হীনমন্যতায় ভোগাবে।
বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রই এত বেশি কমার্শিয়াল, সেখানে আরাম বা আনন্দদায়ক পরিবেশ বিরাজ করে না। দিনের প্রায় পুরোটা সময় যেখানে কেটে যায়, সেই পরিবেশ যদি এমন থাকে, তাহলে একসময় নিজেকে রোবট মনে হয়। চাকরি করলে মানুষ বোধয় রোবটই হয়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি আপনার ভালো কাজের জন্য সাধুবাদ পাবেন না। আপনার কাজে কতটুকু ভুল হল, তা যতটা হাইলাইট করে দেখানো হবে, আপনার ভালো কাজের জন্য ততোটা প্রশংসা পাবেন না। তখন আনন্দ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে যাবে।
অনেক অফিসে কর্মঘন্টা ৮-৯ ঘন্টা করে। তারা সেই সময়টা মেনে চলে। কিন্তু অনেক অফিসেই প্রবেশের সময় নির্ধারিত থাকলেও বের হওয়ার সময় নির্ধারিত নেই। অর্থাৎ নির্ধারিত থাকলেও তা কার্যকর না। সেখানে ওভারটাইম কাজের জন্য কোনো পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না। অফিসে একটু দেরি করে ঢুকলে কথা শুনতে হয়, বেতন কাটা যায়, কিন্তু আপনি অতিরিক্ত কয়েক ঘন্টা ডিউটি করলেও তা কর্তৃপক্ষের নজরেই পড়বে না।
সময়ের সাথে সাথে বাসা ভাড়া, রিকশা ভাড়া, নিত্যকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, টাকার মান কমে যাবে, কিন্তু আপনার বেতন সহজে বাড়বে না। আর দু চার পয়সা বেতন বাড়ালে গলা উঁচু করে শুনিয়ে দেবে, বেতন কিন্তু বাড়িয়ে দিয়েছি, এখন আরও ভালো করে কাজ করতে হবে হুউম।
কর্মক্ষেত্রে আপনি যখন দেখবেন সেখানে মেধা বা কাজের মূল্যায়নের চেয়ে চাটুকারির মূল্যায়ন হয় বেশি, তখন মনে হবে আপনি একটা অসুস্থ পরিবেশে আছেন, সেখান থেকে পালানোর পথ খুঁজতে থাকবেন শুধু।
সারাবছর শুধু কাজ আর কাজ। ছুটি তেমন পাওয়া যায় না। কাজের চাপে আপনি জীবনকে ঠিকঠাকভাবে উপভোগই করতে পারবেন না। অথচ, জীবনের জন্য কাজ, কাজের জন্য জীবন নয়। এত চাপের পরেও মাস শেষে যখন দেখেন, আপনার বেতনের টাকা ঘর ভাড়া দিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রায়, তখন মনে সুখ কীভাবে থাকবে বলুন তো?
যেকোনো দেশে এমন সিস্টেম হওয়া উচিত ছিল, মানুষ ৬-৮ মাস চাকরি করবে, পর্যাপ্ত উপার্জন করবে, বছরের বাকিটা সময় সে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াবে, পরিবার পরিচিতজনদের সময় দেবে। তাহলে পেটের দায়ও রক্ষা হত, জীবনও উপভোগ করা যেত, কাজ করেও আনন্দ পাওয়া যেত। কিন্তু…..
আমাদের ভাগ্যে আছে সারা মাস কঠোর পরিশ্রম, বেতন পাওয়ার দুদিন পরেই খালি হাতে বসে পুরো মাস কীভাবে চলবো সেই চিন্তা, জীবন থেকে আনন্দ ফুরিয়ে যেতে যেতে শরীরে রোগ-শোক বাসা বাঁধা, একটা ভুল সিস্টেমের ভেতর থেকে অকালমৃত্যু মেনে নেওয়া ইত্যাদি!
মোহনা জাহ্নবী,
কাঁঠালবাগান, ঢাকা