পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন সুস্থ পরিবেশ

লেখিকা: মোহনা জাহ্নবী

সেদিন একজনের ফেসবুক নোটে দেখেছি “A toxic workplace will ruin your productivity” কথাটা শতভাগ সত্যি। তবে এটা শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, পরিবারের ক্ষেত্রেও। পরিবার আর কর্মক্ষেত্র এ দুটো জায়গাতেই মানুষের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। আর এ জায়গা দুটোই যদি অস্বাস্থ্যকর হয়, তাহলে তা আপনার যোগ্যতা, গুণ বা মেধা নষ্ট করবেই।

ধরুন আপনি যেই কর্মক্ষেত্রে আছেন, সেখানে আপনার গুণ বা মেধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না। ওপেন সিক্রেট অফিসিয়াল রাজনীতির কারণে আপনাকে ঠিকঠাক কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কিংবা আপনি কষ্ট করে কোনো কাজ করছেন, অথচ কৌশলে তার ক্রেডিট নিয়ে নিচ্ছে অন্য কেউ। অফিসগুলোতে যা অহরহ হয়ে থাকে। তখন আপনার কাজ করার আগ্রহটা নষ্ট হবে। আর যখন আগ্রহ নষ্ট হয়, তখন সেরাটা দেওয়া যায় না বা দিতে ইচ্ছে করে না। আপনি যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যখন অফিস আপনাকে প্রমোশন দেবে না, ইনক্রিমেন্ট করবে না, তখন আপনারও প্রোডাক্টিভিটি কাজে লাগিয়ে দিনরাত এক করে সুন্দর কাজ ডেলিভারি দিতে ইচ্ছে করবে না, স্বাভাবিক। অফিসে অনেক সিনিয়র পাবেন, যারা নিজেরাও জানেন ইয়াং কর্মীরা তাদের তুলনায় কম অভিজ্ঞ হলেও ট্যালেন্টে তাদেরকে অনায়াসে হারিয়ে দেবে। সিনিয়ররা রাজনীতি করে সেসব ইয়াং ট্যালেন্টদের সামনে আসতে দেবে না, নিজেদের হাইলাইট করে রাখবে সবসময় নানা উপায়ে। এতে করে দিনশেষে ক্ষতিটা অফিসেরও, আপনারও। তবে আপনার ক্ষতিটাই বেশি হবে। একটা সুস্থ কর্মক্ষেত্র পেলে আপনি নিঃসন্দেহে একটা ব্রাইট ক্যারিয়ারও তৈরি করতে পারতেন।

একইভাবে পরিবারও আপনার মেধা নষ্ট করতে পারে। কর্মক্ষেত্রের চেয়ে বরং পরিবার আরও বেশি ভয়ানক ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে। শুধুমাত্র পরিবারের জন্য কত প্রতিভা যে ঝরে যেতে দেখেছি, তার হিসাব নেই। একজন হয়ত খুব ভালো গল্প-কবিতা লিখে, কিন্তু তার পরিবার পছন্দ করে না বলে তাকে জোর করে লেখার জগৎ থেকে বের করে আনে, অঙ্কুরেই সব শেষ হয়ে যায়। কেউ নাচতে পারে, গাইতে বা ছবি আঁকতে পারে। কিন্তু পরিবারের জন্য সে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে না যথাযথভাবে। কিংবা একজনের হয়ত স্বপ্ন সে বিমানবালা হবে, আকাশে উড়ে ঘুরে বেড়াবে দেশ-বিদেশ। কিন্তু তার পরিবার তাকে জোরপূর্বক বানিয়ে দেয় স্কুলশিক্ষক। এভাবে কত কত প্রতিভা যে নষ্ট হয়, কত স্বপ্ন যে মরে যায়। অথচ পরিবারের সাপোর্ট থাকলে তারা হয়ত বড় লেখক, চিত্রশিল্পী বা গায়ক হতে পারত। প্রতিভার এমন অপচয় খুব দুঃখজনক।

আবার, যেসব পরিবারে সুস্থ হাওয়া বয় না, যেকোনো কারণেই হোক প্রতিনিয়ত অশান্তি চলতেই থাকে, সেসব পরিবারের সন্তানরাও সাধারণত জীবনে ভালো কিছু করতে পারে না। হয়ত গৎবাঁধা ক্যারিয়ার দাঁড় করাতে পারে। কিন্তু প্রতিভা কাজে লাগিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করতে পারে না। কারণ যেখানে মানসিক শান্তি থাকে না, সেখানে সুন্দর সৃষ্টি একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার!

০৯ জুন, ২০২৪
কাঁঠালবাগান, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাতার শুরুতে