স্টিফেন হকিংয়ের বই ‘দ্যা ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’

প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন করতে হলে আপনাকে প্রথমেই বুঝতে হবে আপনি সেই প্রশ্নটি করতে পারবেন কি না! আপনি খুব সহজেই প্রশ্ন করতেই পারেন Time Travel করা সম্ভব কি না। তবে মহাবিশ্ব এই প্রশ্নকে গ্রহণ করে কি না তা জানাই পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞান হল প্রকৃতির সাথে কথা বলা। যেখানে ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয় গণিতকে।

বিভিন্ন Popular Science এর বই (যেগুলোতে গণিত থাকে না) থেকে পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি সম্মন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। আর এই বই যদি হয় প্রথম সারির কোনো পদার্থবিদের, তবে সেটিই হতে পারে পদার্থবিদ্যার প্রথম পাঠ। ‘দ্যা ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’ বইটি বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিং রচিত। যেখানে স্বভাবতই মহাবিশ্ব নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। পুরো বইয়ে তিনি পাঠককে অবচেতন মনে প্রশ্ন করার আগে শিখিয়েছেন কখন প্রশ্ন করতে হয়, কীভাবে প্রশ্নকে মহাবিশ্বের প্রত্যুত্তরের জন্য গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হয়। বইটির ৫ম অধ্যায়টি লেখা হয়েছে টাইম ট্রাভেল নিয়ে যেখানে একটি অংশ তুলে না ধরলেই নয়,
“তবে ‘টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?’- এই প্রশ্নটি কীভাবে তোলা যাবে এখানে তা-ও স্পষ্ট নয়।”

মূলত স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মাঝে টাইম ট্রাভেল, প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে অতিউৎসাহী হতে দেখা যায়। পদার্থবিদ্যা নিয়ে অতিউৎসাহী হওয়া অমূলক নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই উৎসাহের কারণ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, যেটি পদার্থবিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে তা বোঝাতে ব্যর্থ। ব্যাক্তিগতভাবে বিভিন্ন সাইন্স ফিকশন মুভিতে আমার অংশগ্রহণ এমন ধারণার জন্ম দিয়েছে। তাই কল্পকাহিনীর চেয়ে বিনোদন হিসেবে বই সবসময়ই প্রতিষ্ঠিত একটি সিদ্ধান্ত। এমন ধারণাকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে দ্যা ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল বইটি।

বই শুরু হয়েছে আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইতিহাস দিয়ে। যেখানে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট একটি ধারণা রয়েছে। বিখ্যাত সমীকরণ E=mc^2 সূত্রকে ব্যবহার করে পারমাণবিক বোমা তৈরি হলে যদি আইন্সটাইনকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিমুখী বলে দায়ী করা হয় তবে বিমান দূর্ঘটনার জন্য নিউটন দায়ী, কেননা নিউটন সাহেবই প্রথম মহাকর্ষ সূত্র দিয়েছে।

আপনি যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একীভূত ধারণায় বিশ্বাসী হন তবে এএমন উদ্ভট চিন্তাকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন না। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথ ভিন্ন, বিভিন্ন সময়ে এমন মত প্রকাশ করে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছিলাম। অগভীর চিন্তাধারার মানুষ নিয়ে আমার চিন্তা কম, তবে যখন একাডেমিক বইয়ের রেফারেন্সে এমন হাসাহাসি তখন বলতে বাধ্য হই একাডেমিক বইগুলো ফিলোসফি অব সায়েন্স এর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।

মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমরা কখনোই নিশ্চিত নই। নিউটনীয় বলবিদ্যা, স্পেশাল রিলেটিভিটি আমাদের নিমিত্তবাদ বা ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা দিতে পারার সম্ভাবনা দিতে পারলেও কোয়ান্টাম মেকানিক্সে Uncertainty Principle মহাবিশ্বের ভবিষ্যদ্বাণী করতে ঘোরবিরোধী। প্রাকৃতিকভাবেই কণা জগতের রিয়েলিটির ও বাস্তব জগতের রিয়েলিটি পরস্পর বিরোধী বলেই মনে হয়। স্টিফেন হকিং Uncertainty Principle নিয়ে কথা বাড়িয়েছেন Blackhole এর তথ্য বিভ্রাট পর্যন্ত যা কিনা মহাবিশ্বে time travel এর সম্ভাবনাকে অনেকটাই কমিয়ে দেয়। গাণিতিক বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে টাইম ট্রাভেল সম্ভব তবে এমন ধারণার ফলাফল সন্তোষজনক নয়। শর্ত আরোপিত এসব Time Machine এ প্রবেশই একটি উন্নত প্রাণির দৃশ্যপট হতে মুছে যাওয়ার কারণ হতে পারে। কখনো Time Travel অসম্ভব হলে এটি অসম্ভবের কারণ মহাবিশ্বকে বুঝতে প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন সময়ে হকিং নিজেকে আশাবাদী বলে পরিচয় করিয়েছেন। এই যেমন: ‘আমি হিসাব করে দেখেছি, অতীতে ফিরে কিপ থর্নের তার দাদাকে হত্যা করতে পারার আশঙ্কা ১-এর মধ্যে ১০-এর পিঠে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন শূন্য ভাগের কম।’ সাধারণ চিন্তাধারা দিয়ে আমরা এমন চিন্তাকে পাগলামী মনে করলেও এই আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।

এজন্যই তো, “While there is life, there is hope”

বাংলায় এ বইটির অনুবাদ সাধারণ অনুবাদের মত হলেও কিছু কিছু পরিভাষা বুঝতে পারাকে আমি পদার্থবিজ্ঞান বোঝার চেয়ে কঠিন বলে মনে করি, যে বিষয়গুলো বাংলায় না আনলেই ভালো কিছু হতে পারত। এই যেমন: আলোকশঙ্কু (Light cone), স্তর (Brane), অস্থিরতা (Flactuations), অনুনাদ (Resonant)।

লেখক : মো. সামিউল ইসলাম, শিক্ষার্থী, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর

2 thoughts on “স্টিফেন হকিংয়ের বই ‘দ্যা ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাতার শুরুতে